শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
করোনায় মৃত্যু কমছে কিন্তু নতুন রোগী কেন বাড়ছে?

করোনায় মৃত্যু কমছে কিন্তু নতুন রোগী কেন বাড়ছে?

স্বদেশ ডেস্ক:

সারা বিশ্বেই করোনাভাইরাসে গুরুতর আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসছে।

গত কয়েকমাস ধরেই হাসপাতালগুলোয় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির সংখ্যা কমছে।

যুক্তরাজ্যে এক সময় যখন প্রায় ২০ হাজার রোগী ভর্তি ছিলেন, এখন সেই সংখ্যা কমে এসেছে আট শ’র নিচে।

এক পর্যায়ে পুরো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র কোভিড-১৯ রোগীতে ভর্তি ছিল, যাদের অনেককে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল।

ভেন্টিলেশনে রাখা রোগীর সংখ্যা তিন হাজার তিন শ’ হতে কমে এখন নেমে এসেছে মাত্র ৬৪ জনে।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল এপ্রিল মাসে, এরপর থেকেই তা কমতে শুরু করেছে।

করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরবর্তী ২৮ দিনের মধ্যে যাদের মৃত্যু হয়েছে, সেই হার এখন প্রায় ৯৯ শতাংশ কমে এসেছে। এক সময় যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন এরকম মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার হলেও এখন তা প্রতিদিন ১০ জনে নেমে এসেছে।

অন্যান্য রোগের সাথে তুলনা করলে প্রোস্টেট ক্যান্সারে প্রতিদিন যুক্তরাজ্যে গড়ে ৩০ জনের মৃত্যু হচ্ছে আর স্তন ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে প্রতিদিন ৩০ জন নারী।

তবে করোনাভাইরাসের মৃত্যুর পরিসংখ্যানের মতো সে সব মৃত্যুর খবর টেলিভিশনের খবরে ফলাও করে প্রচার করা হয় না।

তবে গত কয়েকমাস ধরেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সেটার কারণ হয়তো হতে পারে পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কার্ল হেনেগান বলছেন, ‘মার্চ এবং এপ্রিলের দিকে যদি তাকান, তখন নাজুক ব্যক্তিদের অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল। যেমন কেয়ার হোমগুলোয় এক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এখন তরুণদের মধ্যে বেশি সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।’

‘দ্বিতীয়ত, ভাইরাসটির সংক্রমণের মাত্রাও কমে গেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় মানুষজন কম মাত্রায় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসছে, কারণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার প্রবণতাও কমে গেছে।’

সুতরাং এখন কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলেও তার সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি। চিকিৎসকরা এখন আরো ভালোভাবে বুঝতে পারছেন যে, কোভিড-১৯ এর সাথে কীভাবে আরো দক্ষতার সঙ্গে লড়াই করা যাবে।

সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বর্তমানে দুই কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি চার দিনে প্রায় ১০ লাখ নতুন রোগী যোগ হচ্ছে।

মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্বে আট লাখের বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তবে সেটা ফুসফুসের আরেকটা সংক্রামক ব্যাধি, যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়াতে পারেনি।

বাতাসবাহিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, টিউবারকুলোসিস বা টিবি রোগে প্রতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোয় প্রায় ১৫ লাখ লোকের মৃত্যু হয়। দারিদ্র, অপুষ্টি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কখনো কখনো এইচআইভির কারণেও মানুষজন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

তবে কোভিডের সাথে পার্থক্য হলো, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এটা অনেক সময় চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। যদিও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার উর্ধ্বগতিও লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু এখন কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে?

এর মানে যদি হয় যে, শিশুদের স্কুল খুলে দেয়া, তাহলে উত্তর হতে পারে ‘হ্যাঁ’। কারণ তথ্যপ্রমাণ বলছে যে, শিশুদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। যদিও তাদের পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

তবে বয়স যত বেশি হবে, তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততো বেশি হবে।

অধ্যাপক ডেভিড স্পিগেলহালটারের মতে, ২০ বছরের একজনের তুলনায় ৮০ বছরের একজন পুরুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পাঁচ শ’ গুণ বেশি।

তবে এই ভয়াবহ রোগটির বিরুদ্ধে বিজয়ে আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে।

এখনো আসলে গ্রীষ্মকাল চলছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়, এমন ভাইরাস গ্রীষ্মের মাসগুলোয় ততটা শক্তিশালী হয় না। মানুষ এখনো বাইরে সময় কাটাচ্ছে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে, কারো সাথে হাত মেলায় না। সুতরাং একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু এখনো করোনাভাইরাস দূর হয়নি।

মানুষজন যেহেতু অফিস-আদালত করতে শুরু করেছে, বাইরে বের হচ্ছে, অতএব সামনের কিছু দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বোঝার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

‘আমরা জানি, শীতের সময় বিশেষ করে উত্তরের আবহাওয়ায় ফুসফুসের ভাইরাস বিশেষভাবে বেড়ে যায়। সুতরাং এটা এখনো শেষ হয়নি, বরং পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে,’ বলছেন ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ওয়েন্ডি বারক্লে।

ফ্রান্সে দেখা গেছে, সেখানে শুধু নতুন রোগী শনাক্ত নয়, বরং কোভিড-১৯ জনিত অসুস্থতার হার অনেক বেড়ে গেছে।

‘মানুষজন যদি মনে করে যে, ভাইরাসের সংক্রমণ শেষ হয়ে গেছে, সেটা ভুল হবে। ভাইরাসটি এখনো ছড়াচ্ছে এবং আমরা যদি সতর্ক না থাকি, অসুস্থতার হার আরও বাড়বে। আমার মতে, মানুষকে এই পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যেন তারা হাত ধোয়া আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।’ বলছেন অধ্যাপক কার্ল হেনেগান।

তিনি এক্ষেত্রে সুইডেনের উদাহরণ অনুসরণ করার পরামর্শ দেন, যেখানে কখনোই লকডাউন দেয়া হয়নি।

‘সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করা ছাড়া তারা বাড়তি কিছু করেনি। এর মানে হলো রেস্তোরা খোলা থেকেছে, কিন্তু মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেছে এবং কি করছে, সে বিষয়ে সতর্ক থেকেছে।’ তিনি বলছেন।

তিনি বলছেন, কীভাবে কিছু মানুষ সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সক্ষমতা অর্জন করেছে, সেটাও বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।

সম্ভবত প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু সেখানে টি-সেলের একটা প্রভাব আছে, যেটি সংক্রমিত সেল শনাক্ত এবং ধ্বংস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পাশাপাশি তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাস আরো কিছুদিন থেকে যাবে।

‘আমি মনে করি, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি সফলভাবে পশুপাখি থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছে এবং সেটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবন কম। সবচেয়ে বড় আশা হতে পারে টিকা, যা নাজুক ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক হবে।’ তিনি বলছেন।

এডিনবরা ইউনিভার্সিটির ইমুউনোলজি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেস বিভাগের অধ্যাপক ইলেনর রাইলি বলছেন, মহামারির শুরুতে যতটা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের জন্য তার চেয়ে ভালো প্রস্তুতি নেয়া দরকার।

‘আমরা হয়তো রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে সংখ্যা বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমার মনে হয় না যে, সেটা এপ্রিল মাসের মতো হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়বে,’ তিনি বলছেন।

‘আমরা এখন ব্যক্তি বিশেষে ঝুঁকির বিষয়টি ভালোভাবে জানি এবং সেভাবে বয়স্ক ও স্বাস্থ্য সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে পারি। পাশাপাশি অন্য সবাই তাদের নিয়মিত জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারেন।’

এর মানে হলো, মহামারি নিয়ন্ত্রণে এখনো আমাদের প্রত্যেকের বিশেষ ভূমিকা রাখার প্রয়োজন রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে যাদের সাথে বসবাস বা ঘনিষ্ঠতা নেই, তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877